Custom Search

Saturday, January 22, 2011

আপনি ভাল আছেন?

মাদকাসক্ত সন্তানদের হাত থেকে নিষ্কৃতিতে কারাগার খোঁজা

চর মোনাইয়ের রাজারচর গ্রামের এক বৃদ্ধ গত ৬ জানুয়ারি এসেছিলেন বরিশালের বিচারিক হাকিমের আদালতে। দুই সন্তানের বিরুদ্ধে আগেই মামলা করেছেন তিনি। এখন আদালতে এসেছেন, সন্তানদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে কি না, তা জানতে।

আদালত প্রাঙ্গণে তিনি বলেন, মাদকাসক্ত দুই ছেলের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ তিনি। তাই বাবা হয়েও তাদের কারাগারে দেখাটাই তার কাম্য।


গত ২৯ দিনে রাজারচরের ওই বৃদ্ধের মতোই পাঁচ জন নারী তাদের ছেলেদের গ্রেপ্তারের জন্য আদালতের দ্বারস্ত হয়েছেন। আর আদালতও মাদকাসক্ত এ তরুণদের মা-বাবাদের অভিযোগ গ্রহণ করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন।


বরিশালের অনেক অভিভাবকই এখন যন্ত্রণায় রয়েছেন মাদকাসক্ত সন্তানদের নিয়ে। এ জন্য সন্তানদের ভালোর জন্য আপাত খারাপেও আপত্তি নেই তাদের। আর তাই গত ২০ ডিসেম্বর থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত বরিশাল মুখ্য বিচারিক হাকিম ও জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিমের কাছে ছয়টি আবেদন আসে।


রাজার চর গ্রামের ওই বৃদ্ধের অভিযোগ, মাদকের টাকার জন্য দুই সন্তান তাকে মারধর করতেও পেছপা হয় না।


আদালত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২০ জানুয়ারি জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ছেলের বিরুদ্ধে চুরির মামলা করেন বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর গ্রামের এক নারী। ১১ জানুয়ারি প্রায় একই অভিযোগে মামলা করেন নগরীর হাসপাতাল রোডের এক নারী।


নগরীর আরো দুই নারী ছেলেদের বিরুদ্ধে মামলা করেন গত ৩ জানুয়ারি ও ২৯ ডিসেম্বর। ২১ ডিসেম্বর মামলা করেন নগরীর পলাশপুর এলাকার এক নারী।


নগরীর বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই ছয় জন অতিষ্ঠ হয়ে আদালতের শরণ নিলেও এর বাইরেও আরো অভিভাবক রয়েছেন, যারা সামাজিক অবস্থান বা সুনাম ক্ষুণেœর ভয়ে বিষয়টি লুকিয়ে রাখছেন।


গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও এখন পর্যন্ত মাদকাসক্ত ওই ছেলেদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন কোতোয়ালি থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন।


অভিভাবকরা কারাগারকে সমাধান ভাবলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন অন্য কথা। বরিশালের মাদক নিরাময় কেন্দ্র 'হলিকেয়ার' এর পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান সুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "মাদকাসক্তরা অপরাধী নয়, তারা রোগাক্রান্ত। তাদের চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করা যায়। এদের কারাগারে পাঠানো হলে অপরাধীদের সংস্পর্শে গিয়ে আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে।"


সন্তানদের কারাগারে না পাঠিয়ে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।


মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সচেষ্ট রয়েছে বলে জানালেন র‌্যাব কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরুল হক। তবে তরুণ-তরুণীরা যেন মাদকাসক্ত না হয়, সে জন্য পারিবারিক বন্ধন মজবুত করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।